Wednesday 23 December 2015

ঈদে মিলাদুন্নাবী (দঃ) কি এবং কেন?


মিলাদ অর্থ জন্ম। ঈদে মিলাদুন্নাবী অর্থ রাসুলে কারীম (দঃ) এর জন্মদিন উপলক্ষে খুশি উদযাপন করা। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলা’মীন সূরা আম্বিয়ার ১০৭নং আয়াতে এরশাদ করেনঃ “আমি আপনাকে বিশ্ববাসীদের জন্য রহমত স্বরুপই প্রেরণ করেছি”। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলা’মীন এখানে রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ)-কে সমগ্র জাহানের জন্য রহমত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সূরা ইউনুস ৫৮নং আয়াতে এরশাদ করেনঃ “হে রাসুল, আপনি বলে দিন, তারা যেন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও রহমত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করে। এ (খুশি ও আনন্দ উদযাপন) তাদের সমুদয় সঞ্চয় থেকে উত্তম”। সুবাহানাল্লাহ্‌। ১ম আয়াতে আল্লাহ্‌ রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ)-কে রহমত বলেছেন এবং ২য় আয়াতে আল্লাহ্‌ আদেশ দিয়েছেন এই রহমত (রসুলকে) পেয়ে খুশি উদযাপন করতে। শুধু উদযাপন নয়, বরং এই খুশি উদযাপন করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয় (আমল) থেকে উত্তম বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
রাইসুল মুফাসসিরিন আব্দুল্লাহ্‌ ইব্‌নে আব্বাস (রাঃ) সহ সকল মুফাসসিরগন এ বিষয়ে একমত যে, উক্ত আয়াতে বর্ণিত ‘ফাদ্‌ল’ (অনুগ্রহ) ও রহমত দ্বারা রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও বুখারী শরীফে ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠ নিয়ামত’। (বুখারী-২/৫৬৬)
সূরা আলে-ইমরান ১৬৪ নং আয়াতে এরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ্‌ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যেন, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন”। এখানেও আল্লাহ্‌ বুঝাতে চেয়েছেন যে, রাসুলকে প্রেরন করে তিনি মুমিনদের উপর অনেক বড় এহসান করেছেন, তাই এই নিয়ামত পাওয়ার জন্য তাদের খুশি উদযাপন করা উচিৎ।
সূরা আল-বাক্বারাহ ২৩১নং আয়াতে এরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ্‌র নির্দেশকে হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করোনা। আল্লাহ্‌র সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা তোমাদের উপর রয়েছে”। এখানেও আল্লাহ্‌ তাঁর অনুগ্রহ তথা নবীজীর কথা স্মরণ করার আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও পবিত্র কুরআনের আলোকে জানা যায়, আল্লাহ্‌র নেয়ামত প্রাপ্তিতে খুশি উদযাপন করা নবীদেরই সুন্নাত। যেমন ঈসা (আঃ) যখন আল্লাহ্‌র দরবারে নিজ উম্মতের জন্য খাদ্য চাইলেন, তখন এভাবে আরজ করলেন, সুরা মায়েদা ১১৪ নং আয়াতঃ “ হে আমাদের প্রতিপালক, আসমান থেকে আমাদের জন্য নিয়ামতের খান অবতীর্ণ করুন, যা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য ঈদ হয়ে যায়”। পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে ঈসা (আঃ) এ আশাই ব্যক্ত করেছেন যে, যেদিন আল্লাহ্‌ পাকের নিয়ামত অবতীর্ণ হবে, সেদিনটি ঈদ হিসেবে পালিত হোক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল উম্মতের জন্যঃ যা এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের একটি উত্তম পন্থা। ঈসা (আঃ) যদি সামান্য জান্নাতি খাবার পেয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেন তাহলে আমরা রাহমাতুল্লিল আলা’মিনকে (যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ্‌ কিছুই সৃষ্টি করতেন না) পেয়ে কেন ঈদ উদযাপন করতে পারবো না? তাঁর চেয়ে বড় নিয়ামত আর কি আছে বা হতে পারে? বরং এদিন ঈদ মানানো ঈসা (আঃ)-এর ঈদ মানানোর চেয়ে কোটিগুন উত্তম। তাই মিলাদুন্নাবী পালন করা কুরআন হতে প্রমাণিত।

রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ) নিজেই নিজের মিলাদ পালন করেছেন। হযরত আবু কাতাদা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একজন সাহাবী রাসুলের পাকের খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ) আমার মাতা পিতা আপনার কদমে কুরবান হোক। আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন? জবাবে হুজুরে কারীম (দঃ) বলেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহন করেছি এবং এইদিনে আমার উপর ওহী নাযিল হয়েছে। ( মুসলিম শরীফ-২/৮১৯পৃঃ) (বাইহাকীঃ সুনানে কুবরা ৪/২৮৬পৃঃ) (মুসনদে আহ্‌মদ ৫/২৯৭পৃ) (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪/২৯৬পৃঃ) (হিলায়াতুল আউলিয়া ৯/৫২পৃঃ)। দেখুন রেসুলে কারীম (দঃ) প্রতি বছর নয় বরং প্রতি সপ্তাহে নিজের জন্মদিন পালন করেছেন। তাহলে আমাদের প্রতি বছর উদযাপন করাটা কি বৈধ নয়?

রাসুলুল্লাহ্‌ (দঃ) কে পেয়ে খুশি হওয়ার ফলাফলঃ হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্ন দেখি। সে আমাকে বলে “কবরের জিন্দেগিতে আমি শান্তিতে নেই। কিন্তু হ্যাঁ, প্রত্যেক সোমবার তর্জনী আঙ্গুল থেকে আমি মিষ্টি পানি পেয়ে থাকি কেননা আমি সুয়াইবা নামক বাদীকে ( নবীজীর মিলাদের সংবাদ দেয়াই খুশি হয়ে) আযাদ করেছিলাম আঙ্গুলের ইশারায়”। (বুখারী শরীফ- কিতাবুন নিকাহ্‌ ৫১০১নং হাদিস)

এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু লাহাবের সোমবারের এই শাস্তি লাঘবের কারণ রাসুল (দঃ) এর জন্মের খবর আবু লাহাবকে দিলে সে খুশি হয়ে সুয়াইবাকে (খবরদানকারি দাসি) আযাদ করেছিলেন। (ফাতহুল বারি শরহে সাহিহুল বুখারী ৯ম/১১৮পৃ ইমাম ইবনে হাজর আসকাল্লানী)। এখানে চিন্তার বিষয় হল আবু লাহাবের মত কাফের যার ধ্বংস হওয়ার ব্যপারে কুরআনে সূরা নাযিল হয়েছ, যার স্থান সর্বদাই জাহান্নাম, সে যদি নবীজীর জন্মদিনের সংবাদে খুশি হয়ে মাত্র একটি দাসী আযাদ করে প্রতি সোমবারে জাহান্নামে আল্লাহ্‌ তাকে পানি দান করেন, তাহলে আমরা যা মুমিন সুন্নি মুসলমান নবী প্রেমিক তারা মিলাদুন্নাবী পালন করলে আল্লাহ্‌ কি আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন না ? ইনশাআল্লাহ্‌ অবশ্যই দিবন, কেননা তিনি বলেছন নবীকে পেয়ে খুশি উদযাপন করা সকল ঞ্চয়কৃত আমেলর চেয়ে উত্তম (ইউনুস ৫৮) আলহামদুলিল্লাহ্‌।

আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেন "একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কিরামদের নিয়ে হুজুর (দঃ) এর জন্মবিত্যান্ত আলোচনা করছিলেন শ্রবনকারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলে ঠি ওই সময় নবীজী ( দঃ) সেখানে উপস্থি হয়ে বললে, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গিয়েছেএই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন: মাওলুদুল কবীর, আত তানভীর ফী মাওিলিদল বাশীর ওয়ান নাযার, হাকিকতে মহাম্মদী (মিলাদ অধ্যায়), দুররুল মুনাজ্জাম, ইশবাউল কালাম
নবীজীকে পেয়ে আমরা যে জশনে জুলুস বা খুশি হয়ে যে মিসিল বা রেলী করে থাকি তাও কিন্তু নতুন কিছু নয়। বরং এটাও সাহাবীদের সুন্নাত। মুসলিম শরীফের ২/৪১৯পৃঃ বর্ণিত আছে “রাসুল (দঃ) যেদিন হিজরত করে মদিনা শরীফে আগমন করেছেন ঐদিন মদিনাবাসী আবাল-বৃদ্ধ-বানিতা সাহাবীগন রাসুল (দঃ) এর আগমনের শুকরিয়া হিসেবে আনন্দ মিছিল করেছিলেন, আবার অনেকে রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন এবং ইয়া রাসুলুল্ললাহ্‌ (দঃ) স্লোগান দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন”। এটাইতো আমরাও করে থাকি, সাহাবীদের দেখানো পথে হেটে, তাদের সুন্নাতের উপর আমল করি।
এছাড়াও উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহনের প্রসিদ্ধ ঘটনা যা আমরা সকলেই জানি এবং যা ইবনে ইসহাকের সিরাহ সহ অসংখ্য সিরাতের কিতাবে পেয়ে থাকি যে, উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহন করলে সাহাবীগন রাসুল (দঃ)-এর কাছে আবেদন জানান যে তারা ইসলামের সুমহান বাণী ও উমার (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহন করার কথা পুরো মক্কায় প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দিতে চান মিছিলের মাধ্যমে (কেননা উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহনের পূর্বে ইসলাম প্রচার চুপি চুপি করে করা হত, কুফফারে মক্কার অত্যাচারের ভয়ে)। রাসুল (দঃ) তাদের অনুমতি দিলে তারা ৪০ সাহাবী একে অপরের হাত ধরে মক্কার অলিতে-গলিতে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌। সাহাবীগন উমারকে পেয়ে খুশিতে মিছিল করতে পারলে আমরা কি উমারের নবী, সমস্ত নবীদের সরদার, শাফায়াতের কান্দারী, আমাদের ঈমান-জানকে পেয়ে খুশিতে মিছিল করতে পারিনা? অবশ্যিই পারি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে কিছু পথভ্রষ্টদের ঈমান কতইনা দূর্বল হয়ে গিয়েছে যে আজ তারা নিজের পরিবারের বা অন্য কারো জন্মদিন বিধর্মীদের নিয়মে (গানবাজনা, নাচ যা সম্পুর্ন ইসলাম বিরোধী) পালন করলে তাদের বিবেক তাদের বাধা দেয়না, তারা কুরআন হাদিসও দেখেনা। কিন্তু যখনিই কোন নবী প্রেমিক মুমিন রাসুল (দঃ)-কে পেয়ে কুরআন ও শরীয়ত মোতাবেক (মিলাদুন্নাবতে কুরআন-হাদিস পাঠ, নবীজীর উপর দরুদ ও সালাম পাঠ, নবীজীর আলোচনা যা আল্লাহ্‌ পুরো কুরআন জুড়ে করেছেন, সাহাবীদের সুন্নাতের অনুসরণ করে জশনে জুলুস করা, অবশেষে মুনাজাত করা হয়। আপ্নিই বলুন এখানে কোন কাজটি ইসলাম বিরোধী? একটিও পাবেন না বরং সবই কুরআন হাদিস মতে উত্তম কাজ। যখন রাসুল (দঃ) এর জন্মদিন পালন করি তখন কিছু অবুঝের ঈমান/বিবেক কুরআন-হদিস খুজে!! ধিতকার এমন বিবেকে যা ইসলাম ও রাসূল (দঃ) থেকে মানুষকে দূরে রাখে। এটা ঈমান নয় বরং এটা শয়তান। কেননা আমরা পড়েছি ইবনে কাসিরের আল বিদায়া ওয়ান্নেহায়া ২/১৬৬পৃঃ উল্লেখ আছেঃ যখন রাহ্মাতুল্লিল আলা’মিনের জন্ম হলো তখন ইবলিস খুবই কেঁদেছিল ও দুঃখ পেয়েছিল। তাই আজ মিলাদুন্নাবীতে যদি কারো মন ব্যথিত হয়, তাহলে সেই বিবেচনা করুক তাঁর ঈমান কোন দিকে যাচ্ছে এবং কাকে অনুসরণ করছে? রহমানকে নাকি শইতানকে?

কিছু স্বল্পজ্ঞানী বলে থাকে যে এইদিনই রাসুল (দঃ) ওয়াফাত করেছেন, তাই আমাদের শোক পালন করা উচিৎ!! তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি যে হাদিসে এসেছে নবীগন কবরে জীবিত ও তারা নামাযরত। (দেখুন মুসলিম শরীফ ৪/১৮৪৫পৃঃ ২৩৭৫নং হাদিস) (ইবনে মাজাহ্‌ ২/২৯১পৃঃ ১৬৩৭নং হাদিস) (মুসনদে আবু ইয়ালা ৩/৩৭৯পৃঃ ৩৪১২নং হাদিস) এছাড়াও সহীহ হাদিস মতে সাধারন কোন মানুষের জন্যও তিন দিনের বেশি শোক পালন করতে পারবেন না। তাইতো রাসুল (দঃ) আজ পর্যন্ত কেও শোক পালন করেননি। এছাড়াও রাসুল (দ:) বলেছেন “আমার জীবন তোমাদের জন্য কল্যানকর এবং আমার ওয়াফাতও তোমাদের জন্য কল্যাণকর”।
কিছু অবুঝেরা বলে থাকে যে ইসলামে ঈদ নাকি শুধু দুটোই, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আয্‌হা! আসুন আমরা দেখি ইসলামে ঈদ কইটি ও কি কিঃ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (দঃ) এরশাদ করেন, “নিশ্চয় এ এ দিন (জুমুআর দিন) আল্লাহ্‌ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যে ব্যাক্তি জুমুয়া পড়তে আসবে সে যেন গোসল করে ও সুগন্ধি থাকলে উহা লাগায় এবং তোমাদের উপর মিসওয়াক করা আবশ্যক। (ইবনে মাজাহ্‌ ৭৮পৃঃ) অনেকে রেওয়াতে ৯ই জিলহজ্ব অর্থাৎ আরাফার দিনটিকেই ঈদের দিন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। (মিশকাত শরীফ ১২১পৃঃ ও তিরমিযী শরীফ ১৩৪পৃঃ)
 
সুতরাং এ কথা বলা (ঈদ শুধু দুটই) স্বল্পজ্ঞান বা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়াও অসংখ্য ইমাম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাদ্দিদ ও হক্কানী আলেমগন মিলাদুন্নাবী পালন করছেন যার বর্ণনা জগৎবিখ্যাত কিতাব আন-নেয়ামাতুল কুবরা আ’লাল আ’লামে বিস্তারিত রয়েছে। নবম শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতি (রঃ) মিলাদুন্নাবী (দঃ)-এর পক্ষে উনার রচিত স্বীয় কিতাব “হুসনুল মাকাসিদ ফি আমালিল মৌলিদ” ৬৫পৃঃ হাজী ইমদাদুল মুহাজেরে মাক্কী (রঃ) তাঁর ফয়সালায়ে হাফত মাসায়ালে মিলাদুন্নাবী পালন সম্পর্কে উত্তম কথা বলেছেন।
এছাড়াও ইবনে তাইমিয়া (যাকে বাতেলেরা তাদের ইমাম মনে করে) সেও তাঁর কিতাব “ইক্বতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম” এ লিখেছে “ যদি মিলাদ মাহফিল রাসুল (দঃ) এর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ্‌ এ মুহাব্বাত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সাওয়াব বা প্রতিদান দেবেন”। একই কিতাবে সে আরো লিখেছে “ বরং ঐদিনে (রাসুল (দঃ) জন্মদিনে) পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুর(দঃ) এর প্রতি মুহাব্বাত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারণ হবে”। অপরপক্ষে মিলাদুন্নাবী হারাম বা নাজায়েয হওয়ার পক্ষে কুরআন- সহীহ হাদিসতো দুরের কথা বরং দ্বয়ীফ তথা দুর্বল হাদিসও নেই। 
আল্লাহ আমাদের ঈমানকে ছদ্মবেশি বাতেলদের হাত থেকে রক্ষা করে সিরাতে মুস্তাকিমে চলে এই মহান মহান দিবসকে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করার তওফিক দান করুক (আমীন)।



ড. সৈয়দ মুহাম্মাদ ইরশাদ আল বুখারী (মাঃযিঃআঃ)
[ মহাপরিচালকঃ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর,বাংলাদেশ ]

ঈদে মিলাদুন্নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর একটি পর্যালোচনা


## ভূমিকা:
                                  "কুল মাখলুক গাহে হযরত 
                                    বালাগাল উলা বিকামালিহী,
                                   আধাঁর ধরায় এনে আফতাব 
                                  কাশাফাদ্ দোজা বিজামালিহী,


সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য,যিনি কুলজাহানের পালনকর্তা, পরম করুণাময় ও দয়ালু। অসংখ্য দরুদ ও সালাম সেই নবীর প্রতি, যিনি বিধাতার করুণা হয়ে বার-ই রবিউল আউয়াল এ ধরাধামে আত্মপ্রকাশ করেন। যাঁর জন্য আল্লাহ তা'আলা উল্লেখ করেছেন বশীর(সুসংবাদ দাতা), নযীর (সতর্ককারী), সিরাজুম মুনীর(সমুজ্জ্বল ভাস্কর) এবং রাহমাতুল-লিল আ'লামীন (বিশ্বজনীন কল্যাণবার্তা) এর ন্যায় অভিধা সমূহ। সেই সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এ পৃথিবীতে শুভাগমন করলে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল আনন্দের হিল্লোল। তাঁরই পবিত্র স্মৃতিকে মর্যাদা সহকারে উদযাপন করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার নাম ঈদে মিলাদুন্নবী(দ:)। এটা এমন একটি শরীয়ত সম্মত পুণ্যময় আমল, যা কুরঅান-সুন্নাহ দ্বারা সু-প্রমানিত এবং আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। এ নিবন্ধে উল্লিখিত শিরোনামের উপর প্রাসঙ্গিক আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি|

## ঈদে মিলাদুন্নবী'র পরিচয়: 

# শাব্দিক পরিচয়: 'ঈদে মিলাদুন্নবী' শব্দটি একটি যৌগিক শব্দ। যা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত।  এক. ঈদ,
 দুই. মিলাদ,
 তিন. নবী।
 প্রথমতঃ ঈদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ-খুশি, আনন্দ, উত্সব। 
 দ্বিতীয়তঃ মিলাদ শব্দটি ও আরবি। এর শাব্দিক অর্থ-জন্মকাল, জন্মদিন। 
 তৃতীয়তঃ নবী শব্দটি ও আরবি। এর শাব্দিক অর্থ-দূত,খবরদাতা ইত্যাদি। এখানে নবী বলতে হযরত মুহাম্মদ(দঃ) কে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী'র অর্থ হচ্ছে- নবী করিম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র শুভাগমনের আনন্দ উত্সব।
# পারিভাষিক পরিচয়: 'আস-সিরাতুল জামিআ' মিনাল মু'জিযাতিল লামিয়া' নামক কিতাবে উল্লেখ আছে" মাওলিদুন্নবীয়ে ইবারাতুন আন বয়ানে সিফাতিহী ওয়া মু'জিযাতিহী ওয়া শামায়িলিহী মা'আ মা ইনাবিলুহু মিন তারিখে বেলাদতিহী ওয়া নাসালিহী" অর্থ;মিলাদুন্নবী বলা হয় সেই মাহফিল বা অনুষ্ঠানকে যেখানে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয় আর তা হলো- নবী করিম(দঃ) এর গুণাবলি, অলৌকিক ঘটনা, স্বভাব-চরিত্র বা আপাদমস্তকের বর্ণনা, জন্মবৃত্তান্ত এবং বংশীয় শাজরা। কেউ কেউ বলেন-ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) বলতে বুঝায়- এ পৃথিবীতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাওয়ায় সত্কাজ ও ইবাদত- বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা।


## পবিত্র কুরঅানের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ): পবিত্র মিলাদুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কিরামকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদ আয়োজন করেছিলেন। তিনি নিজে ছিলেন বক্তা আর সকল নবী ছিলেন শ্রোতা। ঐ মজলিসের বিষয়বস্তু ছিল- হযরত মুহাম্মদ(দঃ)'র বেলাদত, শান ও মান অন্যান্য নবীগণের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান অানয়ন, সাহায্য ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। ঐ মিলাদুন্নবী (দঃ) মাহফিলের অালোচনা কুরঅান মাজীদের ৩য় পারার সূরা আলে ইমরানের ৮১ ও ৮২ নং আয়াতে উল্লেখ আছে। আল্লাহ বলেন-(৮১)হে প্রিয় রাসুল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের কথা, যখন আল্লাহ তায়ালা নবীগণ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করবো; তারপর তোমাদের কাছে আমার রাসুল যাবেন এবং তোমাদের নবুয়ত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং নিশ্চয় নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বলেন; তোমরা কি এসব কথার উপর অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তখন তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন-'আমরা অঙ্গীকার করছি'। তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষী থাক আর আমি ও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম। (৮২)অতঃপর যে লোক(নবী) এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে, সেই হবে ফাসিক।" এরই ধারাবাহিতায়, প্রত্যক নবী নিজ নিজ যুগে আমাদের প্রিয় নবী ও আল্লাহর প্রিয় হাবীব(দঃ)'র অাবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) উদযাপন করেছেন। যা পবিত্র কুরঅানের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ আছে। সুতরাং এ কথা প্রমাণ হলো যে, ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) পালন করা সুন্নাতে ইলাহী এবং নবীগণের সম্মিলিত সুন্নাত। আর এ মিলাদুন্নবী উদযাপন করা যে শরীয়াত সম্মত ও সাওয়াবের কাজ তা কুরঅান মাজীদের অসংখ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে তৎমধ্যে কয়েকটি আয়াতের নাম্বার সূরার নাম সহ নাতিদীর্ঘ এ প্রবন্ধে উল্লেখ করছি-
@সূরা ইউনুস,আয়াত নং:৫৮
@সূরা আলে ইমরান:৮১, ১০৩, ১৬৪
@সূরা নিসা:১৭৫
@সূরা মায়েদা:১৫, ১১৪
@সূরা তাওবা:৩৩, ১২৮
@সূরা মারয়াম:১৫, ১৬
@সূরা ক্বাসাস:৭
@সূরা সাফ্ফ:৬
@সূরা জুমু'আহ:২
@সূরা বাকারা:৪৭, ১৫২
@সূরা দোহা:১১
@সূরা অাম্বিয়া:১০৭
@সূরা বালাদ:১,২
@সূরা ইব্রাহীম:৩৪
@সূরা নাহল:৮৩, ১১৪
@সূরা ইনশিরাহ:৪
@সূরা ফাতহ:৮, ৯
@সূরা আহযাব:৫৬

## সহীহ হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ): ঈদে মিলাদুন্নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদযাপন করা সহীহ হাদিস দ্বারা ও প্রমাণিত। এমনকি রাসুল(দঃ) নিজে ও রোজা রেখে এবং ছাগল জবাই করে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতঃ আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস শরীফ উল্লেখ করা হল-

@ সহীহ মুসলিমের ১ম খন্ড,৩৬৮ পৃষ্ঠা , কিতাবুস সিয়ামের ১৯৭ নং হাদীস(আল- মাকতাবাতুল ইসলামিয়া, বাংলাদেশ প্রেস অনুযায়ী) এ উল্লেখ আছে-"হযরত আবু ক্বাতাদাহ অানসারী(রঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(দঃ) এর দরবারে আরজ করা হলো-তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখেন কেন? উত্তরে নবীজি ইরশাদ করেন: এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, আমি নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার ওপর কুরঅান অবতীর্ণ হয়। (তথ্যসূত্র: ইমাম বায়হাক্কী, অাস-সুনানুল কুবরা, মাকতাবাতু দারিল বায, মক্কা শরীফ, ১৪১৪ হিজরী, হাদীস নং:৮১৮২, খন্ড:৪র্থ, পৃষ্ঠা:২৮৬/­ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড:৫ম, পৃষ্ঠা:২৯৭/মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, খন্ড:৪র্থ, পৃষ্ঠা:২৯৬) উল্লিখিত হাদিস শরীফ থেকে বুঝা গেল যে, রাসুলুল্লাহ(দঃ) আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে তাঁর জন্মদিন সোমবারে নিয়মিতভাবে রোজা রাখতেন। সুতরাং আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায় করার জন্য 'ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ)' উদযাপন করা রাসুলুল্লাহ'র সুন্নাত।
@ বুখারী শরীফের ২য় খন্ড, ৭৬৪ পৃষ্ঠা, ২১ তম পারা, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং-৪৯১০ (আল-মাকতাবাতুল ইসলামিয়া,বাংলাদেশ প্রেস অনুযায়ী) এ উল্লেখ আছে-"হযরত উরওয়া ইবনে জুবাইর(র:) থেকে বর্ণিত যে, আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার পরিবারের কাউকে (হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) স্বপ্ন দেখানো হল যে, সে খারাপ অবস্থায় আছে। স্বপ্নদ্রষ্টা তাকে বলল, তোমার কী অবস্হা? আবু লাহাব বলল, আমি অত্যন্ত আযাবের মধ্যে আছি; তবে (রাসুলুল্লাহর জন্মের ওপর খুশি হয়ে) ছুয়াইবাহকে মুক্তি দেয়ার কারণে সেদিন (সোমবার) আমাকে পান করানো হয়। (তথ্যসূত্রঃইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, মাকতাবাতু দারিল বা, মক্কা শরীফ, ১৪১৪ হিজরী, হাদিস নং:১৩৭০১, খন্ড:৭ম, পৃষ্ঠা:১৬২/ইমাম আবদুর রাজ্জাক, আল-মুছান্নাফ, আল-মাকতাবাতুল ইসলামী, বৈরুত,১৪০৩ হিজরী, হাদীস নং:১৩৯৫৫, খন্ড:৭ম, পৃষ্ঠা:৪৭৮/ইমাম ইবনু কাসীর, আস-সীরাতুন নববিয়্যাহ,দারুল মারিফাহ্, বৈরুত, খন্ড:১ম, পৃষ্ঠা:২২৪) অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, হযরত আব্বাস(রঃ) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখেছি যে, সে খুব খারাপ অবস্হায় আছে। অতঃপর সে বলল: তোমাদের ছেড়ে আসার পর আমি কোন শান্তি পাইনি, তবে প্রতি সোমবার আমার শাস্তি কিছুটা কমানো হয়। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার জন্মগ্রহণ করেছেন আর আবু লাহাবের দাসী ছুয়াইবাহ রাসুলুল্লাহর জন্ম গ্রহণের সুসংবাদ আবু লাহাবকে দিলে সে তাকে (আনন্দিত হয়ে) স্বাধীন করে দিয়েছে। (তথ্যসূত্র:ইমাম ইবনু হাজর আসকালানী, ফতহুল বারী, দারু নাশরিল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, লাহুর, পা­কিস্তান, ১৪০১ হিজরী, খন্ড:৯ম, পৃষ্ঠা:১৪৫) উল্লিখিত হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, আবু লাহাব হল প্রথম সারির কাফির, যার নিন্দায় আল্লাহ তায়ালা সূরা লাহাব অবতীর্ণ করেছেন। এতদসত্তেও সে রাসূলুল্লাহর জন্মের ওপর ভাতিজা হিসেবে খুশি হয়ে তার দাসী ছুয়াইবাহকে স্বাধীন করে দেয়ার কারণে কবরে তার শাস্তি প্রতি সোমবার কমানো হয়। একজন কাফেরের যদি এ প্রতিদান হয়, তাহলে একজন মুমিন রাসুলুল্লাহর আগমনে খুশি হয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করলে উত্তম প্রতিদানের পরিমাণ কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
@ সহীহ ইবনে খুযাইমার ৩য় খন্ড, ৩১৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং:২১৬১(অাল-মাকতাবাতুল ইসলামী, বৈরুত প্রেস অনুযায়ী) এ উল্লেখ আছ "হযরত আনাস(রঃ) বলেন-নবুয়াত প্রকাশের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের আক্বীকাহ করেছেন। "ইসলামের ইতিহাস ও নির্ভরযোগ্য সিরাতের কিতাবের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, রাসুলুল্লাহ(দঃ)'র দাদা রাসুলুল্লাহ জন্মের সপ্তম দিনে তাঁর অাক্বীকাহ সম্পন্ন করেছেন। সাধারণতঃ আক্বীকা দুইবার হয় না; কিন্তু নবীজি আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করার জন্য দ্বিতীয়বার আক্বীকা তথা ছাগল জবাই করেছেন। সুতরাং এ কথা স্পষ্ট হল যে, রাসুল (দ:)'র জন্ম উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নাত। তাইতো আমরা এ সুন্নাতের উপর আমল করি।
> হযরত ইবনে দাহইয়া(রঃ) আত-তানভীর ফি মাওলিদিল বশিরিন নযীর কিতাবে উল্লেখ করেন- "হযরত ইবনে আব্বাস(র:) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন তিনি কিছু লোক নিয়ে নিজ গৃহে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মকালীন অলৌকিক ঘটনাবলি বর্ণনা করছিলেন। ইত্যবসরে প্রিয় নবী হাজির হলেন এবং বললেন: তোমাদের জন্য আমার শাফা'আত আবশ্যক হয়ে গেল। 
@ আদ-দুররোল মনাজ্জম নামক কিতাবে আল্লামা আবদুল হক এলাহাবাদী উল্লেখ করেন- "হযরত আবু দারদা(রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-আমি একদিন নবীজির সাথে সাহাবী আবু আমের আনসারী(রাঃ) এর ঘরে গমন করে দেখতে পেলাম যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি, অাত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করে রাসুলে আকরম(দঃ)'র পবিত্র জন্মকালীন সময়ের ঘটনাবলীর বর্ণনা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন, আজই সেই পবিত্র মিলাদের দিন। এ মাহফিল দেখে নবীজি খুশি হয়ে তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য রহমতের অসংখ্য দরজা খুলে দিয়েছেনন এবং ফেরেশতারাও তোমাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করছেন।

###খোলাফায়ে রাশেদীনের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ): সাহাবায়ে কিরাম বিশেষতঃ খোলাফায়ে রাশেদীন(রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা অানহুম) নিজেরাই ভক্তি ও মোহাব্বত নিয়ে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) উদযাপন করেছেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকে ও তা পালন করার উৎসাহ দিয়েছেন। এ মর্মে কুরঅান ও হাদীসের অসংখ্য দলিল রয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর মক্কী হায়তমী(রঃ) প্রণীত প্রসিদ্ধ কিতাব "আন-নি'মাতুল কুবরা আলাল আলম ফী মাওলিদি ওলদে আদম" এর মধ্যে কতিপয় হাদিস শরীফ পরিলক্ষিত হয়-

@ ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক(রাঃ) বলেন: "মিলাদুন্নবী উপলক্ষে যে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নতে আমার বন্ধু হবে।"

@ দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ফারুক(রঃ) বলেন: "যে মিলাদুন্নবীকে সম্মান করল, সে যেন ইসলামকে যিন্দা করল।"

@ তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান(রাঃ) বলেন: "যে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কমপক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে, সে যেন বদর এবং হুনায়নের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করল।"

@ চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) বলেন: "যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবীকে সম্মান করবে এবং মিলাদ শরীফ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে, সে দুনিয়া থেকে ঈমান সহকারে মৃত্যু বরণ করবে এবং কোন হিসাব- নিকাশ ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করবে।" এভাবে সাহাবী পরবর্তী তাবেয়ী-তবয়ে তাবেয়ী পর্যায়ক্রমে যুগে যুগে ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) পালন হয়ে আসছে।

###শেষকথা:পরিশেষে বলা যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম উপলক্ষে সকল ঈদের সেরা ঈদ-ঈদে মিলাদুন্নবী(দঃ) উদযাপন করা শুধু বৈধ নয়; বরং অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। কুরঅান ও হাদীসের সুস্পষ্ট দলিল থাকা সত্ত্বেও যারা এটাকে বিদআত বলে তারা মুর্খ ও পথভ্রষ্ট।এদের গোমরাহী থেকে আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদেরকে হেফাযত করুন। আমীন!